শান্তনু বেজ



পেরেকভেজাশিশির

হেমন্তের জলঃ  হিম/ শিশির/ ভুল কুয়াশা /ঠিক পানি  ...আরও কত নামে রাতের ভেজা ভেজা পা, ঘাসপা, ফড়িং জড়ানো দোল দোল রঙিন আলোবলের প্রস্তুত ঘাসঠোঁট, জীবন আনন্দীয় লুক্ .... একটা বর্ষার বিপরীত প্রতিবেদন...একটি দিনআনা খাওয়া ঘুমিয়ে পড়া রিক্সার রাতভর ভেজা=[ শিট্ চাকা হাতল হর্ন ]...আমার জুতোর ভিজে অংশস্পর্শ...বাবার আধপোড়া এঁটো বিড়ির পূর্ণ হেমন্ত রাতস্নান...মায়ের তাজা হয়ে ওঠা পালংশাক...

 জলন্দী নামে ওকে ডাকি
 
লুকিয়ে থাকে, টিনশেডে, পেঁচার পালকে, দেরী করে ঘরফেরা রুনুর বুক ওড়নায়, ক্লান্ত ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির পোশাকের সাথে শ্রমিকের ঘরে ঢোকে। অনির্বাচিত বন্ধু সে
লুকিয়ে থাকে আমার দক্ষিণ পাড়ার শেষ মন্দিরে , ফাটলের শিকড় আকড়ে। অম্লান বন্ধু সে

তার কাছে গত তিনদিন যাওয়া হয়নি

সে নিয়ম করে রোজ
                   জল আঁকে। রোদের উপর
                       যা=
                                  পাতার শেষে
                                  ফুলের খাঁজে
                          ....ব্যর্থ পরাগের পাশে....
শিকড়ে শিকড়ে। ফাটলে ফাটলে
রাতের সকালে, সে লুকিয়ে থাকে, চুপস্ রহে
জল জল হয়ে মৃত্যুর তেজ দিয়ে
                   সফল রোদ্দুর হয়ে ফোটে

আমার এখন প্যান্ডেল ভাঙার সময়
কিছুদিন সমস্ত বাঁশ কাপড় নিয়ে থাকবো
তারপর আবার ঐ ফাটলের কাছে যাবো

মন্ডপ শেষে, প্যান্ডেল ভেঙে
যা কিছু পরিত্যক্ত পেরেক, কুড়িয়ে রেখেছি
এঁটো ঠোঙায়, ছোট ছোট পেরেক...
(এই'কদিন অগুনতি পাওনার হপ্তা। উসুলের দিনে, আবেগের মাশুল দিতে পারি না। আমি গুছিয়ে রাখা কবির নিয়মিত  কবিতা । পাঁজরের চারকোণে পায়রা পুষি, আর ঘরের চার দেওয়ালে  রেহাই-ম্যাপ)

সখ করলাম। স্বপ্ন দেখলাম। খেয়াল এলো
পেরেকগুলো
মন্দিরের পিছনে রেখে আসবো
রাতে ঘর থেকে রুনুর খাবার খেয়ে, চুমুর রপ্তটুকু পুনরায় করে, বিছানা নোংরা করে- মন্দিরের পিছনে যাবো।
তুমি বিশ্বাস করোঃ জলন্দী।  আমি যাবো
আমি সব কাজের শেষে, তোমার নরমে, তোমার কাছে যাবো
আমার এঁটো বুকে, পেরেক বিছিয়ে চাতালের উপর  শুয়ে থাকবো। সারারাত। তোমার টুপটাপ। আমার মিহি কারুবাসনা। তোমার পেরেকভেজা রাত। আমার ভুল শ্রাবনের আদুরী পল্লব। তোমার জলশব্দ। আমার বুকজিক...
সকালের রোদ। তোমার ডেথ পেনাল্টি। পেরেকের রঙ খয়েরি হবে৷ ঈশ্বর আছেন
পেরেকের রঙ খয়েরী হবে। হবেই, জলন্দী 

(ঈশ্বর আছেন। ঈগলপাখি আছে)

জলন্দী,  ওগুলো তোমার শুকিয়ে যাওয়া
রক্তচাপ। রক্তদাগ। রক্তচূ্র
আমি'যে এক (পুরাণে, পুরাতনে লুকানো) শয়তানি পাখি
সারারাত বুকে পেরেক পেতে রাখি
তোমাতে ভিজি, রুগী হই, পাগল শুনে থাকি
শুধু তোমার রক্ত দেখবো বলে, জলন্দী
তোমার রক্ত ....জলন্দী ...
তোমার রক্তের রং চিনবো বলে ....


12 comments:

  1. তোকে জলন্দী নামে ডাকলে খুব কি মাইন্ড করবি?! মানে মেয়ে হলে ওই নামে ডাকা'ই যেত... আর পাঁজরের চারপাশে যে পায়রা পোষা আছে, তাদের চিঠিখাদ্য দিস... আহা..

    ReplyDelete
  2. তোমার নিজস্ব শব্দভৈরবীর সুরে জলন্দী মেয়েটির শিশিরভেজা শরীর জেগে থাকে। খুব ভালো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ যুগান্তরদা

      Delete
  3. দুর্ধর্ষ। জলন্দী-ঈ-ঈ......

    ReplyDelete
  4. ভালো লাগল। জলন্দীর রক্তের রং আরও রাঙ্গা করে তুলুক আপনার কলম। শুভ কামনায়...

    ReplyDelete
  5. শান্তানুর কবিতা শরীরে সাহস জড়িয়ে নিচ্ছে আরও অনেকটা। ভালো লেগেছে কবিতাটি

    ReplyDelete
  6. তোমার প্রকাশভঙ্গি অনন্য মনে হল। প্রথম কবিতার শেষ দিকটায় কবিতার উত্তরণ বেশ ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  7. ami sararat buke perek pute rakhi.... sabash...dada.. porechilam agei/

    ReplyDelete