ডায়েরি
০৩ নভেম্বর
২০১৬, দুপুর
দুপুরের বারান্দা হতে নেমে দেখি মেঘের ভেতর রেডিওস্টেশন; দূপুরটি
গান হয়ে বাজে। পাড়ার গানের দলে গান হয়ে আমিও ছিলাম। ওরা গেছে বায়নার গান নিয়ে দূরের
মেলায়
আমার কোথাও যাওয়া কেন যে হয় না !
অপেক্ষা দীঘিটির ঘাট হয়ে, কংক্রিট হয়ে পড়ে আছে
ঘাটে স্নানের পর রূপসী ফড়িং তার ডানা দুটো ফেলে গেছে, কুড়িয়ে
নিয়ে আমি পকেটে রেখেছি
আমার ফড়িংজন্মে ডানা দুটো উড়বার কাজে লাগতে পারে
একফোঁটা ডেটলগন্ধে হাসপাতাল বাড়ি চলে আসে। বকের পাখায় উড়ে কাছে
আসে একঝাঁক নার্স। তারপর আবিষ্কার করি, আমি শুয়ে আছি সাদা বিছানার সমুদ্রঢেউয়ে। এবং
ভাঁটির টানে ভেসে যাই; ফিরে আসি জোয়ারে তোমার
করিডোরে দীর্ঘ হেঁটে আসা বিড়ালটি; মনে হয় মৃত্যুদূত হবে! দেখি
তাও তোমার উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে গিয়েছে
০৪
নভেম্বর ২০১৬, ভোর
সমস্ত ছুটির দিন জিরাফের
লম্বা গলা; ঘাস খেয়ে আসতে চায় স্যাভানার বনে। সে ক্ষেত্রে ভরসা চ্যানেল জিওগ্রাফি। স্ক্রিন খুলে দেখি,
হ্যালিকপ্টারে চড়ে আকাশের বাড়ি হতে একজন লাফ দেয় রোমাঞ্চ জাগাতে।
আমার তাতেও কিছু রোমাঞ্চ হল
গভীর পর্যবেক্ষণে মনে
হল; রিমোট বাটন টিপে পৃথিবী দেখা হস্তমৈথুন প্রায়
কাছের ধানক্ষেত ছুটির দিনেও
তুমি দূরের নেপচুন
০৪ নভেম্বর ২০১৬, সকাল
অজস্র ঝরাপাতা! কোন কবি
লেখার টেবিলে; লেখা না হওয়ায় পাতাগুলো ছুঁড়ে ফেলে গেছে। সমস্ত বছর ধরে কম বেশি
পাতাগুলো ঝরে ফেলে গাছ
আমার উঠোন দেখে মনে হয়
গাছদের রিসাইকেল বিন
অনেক ভাবনা, তার সামান্য
লেখা আর সমস্ত লেখা থেকে দু’একটি তোলা থাকে টাইম লাইনে
০৫ নভেম্বর ২০১৬, সকাল
ডেটলমেশানো হাওয়া; ক্ষতগুলো সেরে ওঠো। নিমডালে তেতুপাখিডাক, গ্লাসে ভরে পান করি।
দিগন্ত
বিছানো এই ধানখেত, সোনাপাড়াগ্রাম তুমি সবুজ হাসপাতাল
চিকিৎসা ও নার্সিং-এ সারিয়ে তোল রুগ্ন কবিকে
অসুখের কবিতায় ডেটলগন্ধ যতই ছড়িয়ে থাক, কবির অসুখ সারানোর বাসনায় সুখ জেগে থাকে। আপাত সরল শব্দবিছানায় সোনাপাড়াগ্রাম ভালো লাগার ঠিকানা হয়ে ওঠে।
ReplyDeleteকবি, কবিতা থেকে কবিতায় আপনাকে পাওয়া অনেক সুখের। ধন্যবাদ আপনাকে ।
Deleteদারুণ। দারুণ। দারুণ।
ReplyDeleteআন্তরিক ধন্যবাদ।
Deleteএত এত ছবি আছে কবিতাগুলোয়---- অসুখ পেরিয়ে যাওয়া যায় আরোগ্যের দিকে (অনিন্দিতা গুপ্ত রায়)
ReplyDeleteঅনিন্দিতা, সুখ রেখে গেলে এখানে, তোমার এই বলবার মধ্যে । তুমিও ভালো থেকে, সুখি হও ।
Deleteকরিডোরের বিড়ালের হাঁটা,, সত্যিই কি নিঃশব্দতা থাকে এই অস্তিত্বে...
ReplyDeleteমাসুদারদা.. দারুণ এই মেঘের ভিতরে রেডিওস্টেশন
শান্তানু, তোমার এই উপস্থিতি অনেক সুখের। সুখি হও, ভালো থেকো... কবিতায় থেকো।
Deleteআমার কোথাও যাওয়া কেন যে হয় না
ReplyDeleteমাসুদারদা কি বলি!!!!!
ধন্যবাদ। অনেক অনেক শুভ কামনা।
Deleteদারুন হয়েছে।বিশেষ করে এই লাইন গুলোঃ ১।দুপুরের বারান্দা হতে...দুপুরটি গান হয়ে বাজে।২। অপেক্ষা দীঘিটির...।৩।বকের পাখায়...ইত্যাদি।========জয় হোক কবির। @ রেজা রাজা।
ReplyDeleteধন্যবাদ। ভালো হোক, মঙ্গল হোক...
Deleteআগেই পড়েছিলাম। আজ আবার পড়লাম। ধৈর্য সহকারে। ৩য় নভেম্বর এর প্রথম ও শেষ লাইন দুটি অসাধারণ মনকেমন করা। ভালো লেখা না। অসাধারণ প্রকাশ। অনেক ধন্যবাদ। লিঙ্ক আবার শেয়ার করার জন্য।
ReplyDeleteধন্যবাদ, শম্পা।
Deleteমাসুদার রহমানের কবিতাপাঠে একটা বাড়তি আনন্দ পাই। বাংলার প্রকৃতি আর জীবন তার কবিতায় প্রবলভাবে উপস্থিত। খুব চিত্রময় ওর কবিতা। সে-কারণে ইমেজ আর ছবি। যে টুকরো-টুকরো ইমেজ,ছবি তিনি আঁকেন সেগুলো আলাদা হয়েও সমগ্রের ঐকতানকেই তুলে ধরে। হয়তো প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থাকেন মাসুদার।নইলে এমনটা সম্ভব হতো না। আর ওর ভাষা চমক-নির্ভর নয়; বানিয়ে তোলা বা ফাঁপা ফানুস নয়। একজোড়া অন্তর্ভেদী সদাজাগর চোখ আছে মাসুদারের।যাতে কোনো গ্লুকোমা নেই, ধোঁয়াশার আবরণ নেই। আমি মুগ্ধ ওর সাবলীল ভঙ্গি ও ভাষায়। (তবে 'হেলিকপ্টার'কে 'হ্যালিকপ্টার' লেখার কারণ বোঝা গেল না!)
ReplyDeleteধন্যবাগ, প্রিয়কবি।
ReplyDelete